রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন

কাউকে বই চাপিয়ে দিবেন না কিন্তু পাঠাভ্যাস চাপিয়ে দিন!

রাজু আহমেদ।।
বাসায় জামাকাপড় রাখার জন্য বড় বড় আলমিরার উপস্থিতির চেয়ে বই রাখার জন্য বেশি বেশি সেলফ রাখুন। সেখানে থরে থরে বই সাজিয়ে রাখুন। কোথাও থেকে স্বীকৃতির ক্রেস্ট কিংবা সম্মাননা স্মারক পেলে সেগুলো গৃহের সবচেয়ে বেশি ফোকাস হয় তেমন স্থানে সংরক্ষণ করুণ। কেউ কোন বই উপহার দিলে সেখানে কৃতজ্ঞতা স্বীকার লিখে রাখুন। ঘরের মধ্যে অনেকগুলো থালা-বাটি, কাপ-পিরিচ কিংবা এমন কোন অতিরিক্ত কাপড় রাখবেন না, যা আপনার এবং পরিবারের অন্যান্যদের ব্যবহারের অতিরিক্ত-হোক তা যতোই দামী!

আপনার পরবর্তী প্রজন্মের যেন বুঝতে পারে আপনি পোশাকের চেয়ে বইকে বেশি প্রধান্য দেন। আপনার থেকে শিখতে পারে, কাপড়ের চেয়ে বিদ্যার মূল্য অধিক। থালাবাটির চেয়ে লেখার প্রতি আপনার ফ্যাসিনেশন বেশি। আপনি সারাজীবন কাজ করেছেন এবং সেগুলোর জন্য সম্মানিত হয়েছেন এবং স্বীকৃতি পেয়েছেন-এটা বোঝানোর জন্য আপনার পাওয়া স্মারক-ক্রেস্টগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখবেন। শিশুরা যেনো বুঝতে শিখে আপনি বাহিরের চাকচিক্যের চেয়ে ভেতরের সৌন্দর্যকে বেশি গুরুত্ব দেন-সেজন্য পড়েন। শিশুদেরকে সাথে নিয়ে পড়তে বসবেন। কাউকে বই চাপিয়ে দিবেন না কিন্তু পড়া চাপিয়ে দিন।

সুখের তালিকায় বাংলাদেশ ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। আপনি কি ভাবছেন, মানুষ ভোগ করতে পারছে না বলে সুখের এই দুরবস্থা? না। মানুষের লোভ বেড়ে গেছে। পরের সাথে তুলনা দিয়ে মানুষের ভালো থাকার চেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ নিজের অবস্থা ও অবস্থান দেখে, যোগ্যতা ও প্রাপ্তি মেপে নিজেকে বিচার করতে ভুলে গেছে। সে কেবল অপরের সাথে নিজেকে তুল্য করে। কিছু না পেলেই শোকে মরে! সে রোজ রোজ পোশাক কেনে, বারবার ডিজাইন বদলায়! ননিজেকে বদলায় কিঞ্চিৎ! কোনদিন ব্যবহার করবে না জেনেও সে প্রচুর তৈজসপত্র খরিদ করে। বই কেনে না। বই পড়ে না। যে অভ্যাস তাকে সুখী করতে পারতো, জাগতিক দুঃখ-দুর্দশা থেকে দূরে রাখতো পারতো কিংবা অপরের সাথে শত্রুতা হৃাস করতে পারতো-সেই অভ্যাসে সে নাই। তার ঘরে বই নাই। অবসরের সাথে বই নাই।

কাউকে উপহারে বইয়ের কথা বললে তার মুখে অমাবস্যার আকাশ ভেঙে পড়ে! কাউকে পড়তে বললে তার সাথে যেন রাজ্যের শত্রুতা বাড়ে! না পড়লে মানুষ শিখবে কোথা থেকে? যে মানুষ জানতে চায় না, যে মানুষের মনে প্রশ্ন নাই-সে মানুষ কেমন মানুষ? ঘরে বই থাকলে সে না পড়ে পারে না! বই কখনোই ক্ষুধার বিরুদ্ধে দাঁড়ায় না। তবে কী খাওয়া যাবে আর কোনটা ক্ষতিকর সে জানিয়ে দেয়। বই লোভের বিরুদ্ধে, বই অহংকার-দম্ভের বিরুদ্ধে, বই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। বই কথা বলতে ও বলাতে শেখায়। সততা ও অসততা পার্থক্য দেখায়। নীতি ও দুর্নীতির পালনীয় ও বর্জনীয় শেখায়। যারা বই পড়ে না, বই পছন্দ করে না কিংবা বই কেনে না-তারা থেকেও নাই! বেঁচে থেকেও যা ইচ্ছা তাই! বোধ-বিবেক বেচে দিতে তারা সময় নেয় না।

বই পড়া আন্দোলন জোরদার হওয়া জরুরি। পরিবারকেন্দ্রিক বই পড়ার অভ্যাস ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হোক। স্কুল-কলেজগুলোতে সিলেবাসের বাইরের অন্য সকল বই পড়ার সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। শিক্ষক বই পড়াকে বাজে অভ্যাস মনে করছে! অন্যান্য পেশাজীবীরা বই পড়াকে সময়ের অপচয় ভাবছে। শহরের লাইব্রেরিগুলোতে ক্রেতা কমে যাচ্ছে! বইয়ের ব্যবসা উঠে যাচ্ছে! সেখানে ফাস্ট ফুড এবং শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাহারি জুতোর দোকান বসছে! মানুষের সাথে বইয়ের এই দূরত্ব-শত্রুতা বেড়ে গেছে বলেই সমাজের এই দুরাচার। বিবেকের ব্যবহারে খরা! মানুষ ঘরে বই নিতেই চাচ্ছে না। মনে হয় যেন বই যেন কোন এক দুর্গন্ধ আবর্জনা! ঘরে বই থাকলেই সে তাড়াতাড়ি মরবে!

বই পড়ুন, বই কিনুন। আলোকিত জীবন গড়তে পারবেন কি-না জানিনা তবে অন্ধকার বহুলাংশে কমে আসবে। সাংসারিক জটিলতায় কম জড়াবেন, কারো পিছে নিন্দে করার বদঅভ্যেস কমে যাবে! অন্যায় করার সময়েও একটি জেড়ালো বার্তা পাবেন,’যা করছেন তা ঠিক নয়!’ গৃহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বই রাখুন। খাটের শিয়রে বই রাখুন। অফিসের ড্রয়ারে বই রাখুন। তবে সাজিয়ে রাখার জন্য মোটা মোটা বই নয়। পাঠের জন্য সিলেক্টিভ বই পড়ুন। রোজ নিজেকে অল্প অল্প করে বদলান,একটু একটু করে গড়ুন। বই আপনাকে সহায়তা করবে। আপনি শুধু বইকে কাছে রাখুন। পড়ার অভ্যাসই আপনাকে অযাচিত মানুষ, ক্ষতিকর অনুষঙ্গ থেকে দূরে রাখবে। একটা নিরাপদ জীবনের ঠিকানা দেবে।

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Titans It Solution